প্রজনন অঙ্গ: ফুল (11.2.1)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) জীবের প্রজনন | - | NCTB BOOK
181
181

প্রজননের জন্য রূপান্তরিত বিশেষ ধরনের বিটপ (Shoot) হলো ফুল। ফুল উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের প্রজনন অঙ্গ। আমরা জানি যে একটি আদর্শ ফুলের পাঁচটি স্তবকের মধ্যে দুটি স্তবক (পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক) প্রজননের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এরা সরাসরি প্রজননে অংশ নেয়, অন্য স্তবকগুলো সরাসরি অংশ না নিলেও প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে। যে ফুলে এই পাঁচটি স্তবকই উপস্থিত থাকে তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন জবা, ধুতুরা। এর যেকোনো একটি স্তবক না থাকলে সে ফুলকে অসম্পূর্ণ ফুল বলে। যেমন- লাউ, কুমড়া। বৃতযুক্ত ফুলকে সবৃন্তক যেমন-জবা, কুমড়া এবং বৃত্তহীন ফুলকে অবৃন্তক ফুল বলে যেমন- হাতীশুঁড়। যখন কোনো ফুলে পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক দুটোই উপস্থিত থাকে, তাকে উভলিঙ্গ ফুল (Bisexual flower) যেমন- জবা, ধুতুরা। পুংস্তবক বা স্ত্রীস্তবকের যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে তাকে একলিঙ্গ ফুল (Unisexual flower) যেমন লাউ, কুমড়া এবং দুটোই অনুপস্থিত থাকলে ক্লীব ফুল (Neuter flower) বলে।
ফুলের বিভিন্ন অংশ
(a) পুষ্পাক্ষ (Thalmus): পুষ্পাক্ষ সাধারণত গোলাকার এবং ফুলের বৃত্তশীর্ষে অবস্থান করে। এর উপর বাকি চারটি স্তবক পরপর সাজানো থাকে।
(b) বৃতি (Calyx): ফুলের বাইরের স্তবককে বৃতি বলে। বৃতি খণ্ডিত না হলে সেটি যুক্তবৃতি, কিন্তু যখন এটি সম্পূর্ণরূপে খণ্ডিত হয়, তখন তাকে বিযুক্তবৃতি বলে। এর প্রতিটি খণ্ডকে বৃত্যাংশ বলে। সবুজ বৃতি খাদ্য প্রস্তুত কাজে অংশ নেয়। এদের প্রধান কাজ ফুলের ভিতরের অংশগুলোকে রোদ, বৃষ্টি এবং পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। তবে যখন বৃতি রং-বেরঙের হয়, তখন তারা পরাগায়নে সাহায্য করে অর্থাৎ পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এমন পোকামাকড়, পশু, পাখি ইত্যাদিকে আকর্ষণ করে।
(c) দলমণ্ডল (Corolla): এটি বাইরের দিক থেকে দ্বিতীয় স্তবক। প্রতিটি খণ্ডকে দল বা পাপড়ি বলে। পাপড়িগুলি যুক্ত থাকলে যুক্তদল এবং আলাদা থাকলে বিযুক্তদল বলা হয়। পাপড়ি সাধারণত রঙিন হয় এরা ফুলের অত্যাবশ্যকীয় অংশগুলোকে রোদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। উজ্জ্বল ঝলমলে রঙের দলমণ্ডল পোকামাকড় ও পশুপাখি আকর্ষণ করে এবং পরাগায়নে সহায়তা করে। অনেক সময় ফুলের পাপড়ি কোনো কোনো পোকামাকড়কে বসে মধু খেতে সাহায্য করে। এসব কার্যক্রম চলাকালীন পরাগায়নের কাজটি হতে থাকে।

চিত্র 11.01: একটি ফুলের বিভিন্ন অংশ (লম্বচ্ছেদ)।

(d) পুংস্তবক (Androecium): এটি ফুলের তৃতীয় স্তবক এবং একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। এই স্তবকের প্রতিটি অংশকে পুংকেশর (stamen) বলে। একটি পুংস্তবকে এক বা একাধিক পুংকেশর থাকতে পারে। প্রতিটি পুংকেশরের দুইটি অংশ যথা- পুংদন্ড বা পরাগদন্ড (filament) এবং পরাগধানী বা পরাগথলি (anther)। পুংকেশরের দণ্ডের মতো অংশকে পুংদণ্ড এবং শীর্ষের থলির মতো অংশকে পরাগধানী বলে। পরাগধানী এবং পুংদন্ড সংযোগকারী অংশকে যোজনী বলে। পরাগধানীর মধ্যে মধ্যে পরাগ উৎপন্ন হয়। এই পরাগরেণু অঙ্কুরিত হয়ে পরাগনালি (Pollen tube) গঠন করে। এই পরাগ নালিকায় পুংজননকোষ (Male gamete) উৎপন্ন হয়। পুজেননকোষ সরাসরি জনন কাজে অংশগ্রহণ করে। কখনো পুংস্তবকের পুংদণ্ডগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। আবার পরাগথলিগুলোও কখনো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। পরাগদণ্ড এক গুচ্ছে থাকলে তাকে একগুচ্ছ (Monadelphous), (যেমন: জবা), দুই গুচ্ছে থাকলে দ্বিগুচ্ছ (Diadelphous), (যেমন: মটর) এবং বহুগুচ্ছে থাকলে তাকে বহুগুচ্ছ (Polyadelphous) পুংস্তবক বলা হয়, (যেমন: শিমুল)। যখন পরাগধানী একগুচ্ছে থাকে, তখন তাকে যুক্তধানী বা সিনজেনেসিয়াস (Syngenesious), মুক্ত অবস্থায় এবং পুংকেশর দলমণ্ডলের সাথে যুক্ত থাকলে তাকে দললগ্ন (Epipetalous) পুংস্তবক বলে (যেমন: ধুতুরা)।

চিত্র-11.02: পুংকেশরের বিভিন্ন প্রকার সজ্জা (ক) একগুচ্ছ, (খ) দ্বিপুচ্ছ, (গ) বহুগুচ্ছ, (ঘ) যুক্তধানী এবং (ঙ) দললগ্ন

(e) স্ত্রীস্তবক (Gynoecium): স্ত্রীস্তবক বা গর্ভকেশরের অবস্থান ফুলটির কেন্দ্রে। এটি ফুলের আর একটি অত্যাবশ্যকীয় স্তবক। স্ত্রীস্তবক এক বা একাধিক গর্ভপত্র (Carpel) নিয়ে গঠিত হতে পারে। একটি গর্ভপত্রের তিনটি অংশ, যথা: গর্ভাশয় (Ovary), গর্ভদন্ড (Style) এবং গর্ভমুন্ড (Stigma)। যখন কতগুলো গর্ভপত্র নিয়ে একটি স্ত্রীস্তবক গঠিত হয় এবং এরা সম্পূর্ণভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে, তখন তাকে যুক্তগর্ভপত্রী (Syncarpous), আর আলাদা থাকলে বিযুক্তপর্ভপত্রী (Polycarpous) বলে।
গর্ভাশয়ের ভিতরে এক বা একাধিক ডিম্বক বিশেষ নিয়মে সজ্জিত থাকে। এসব ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রীপ্রজননকোষ বা ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়। এই ডিম্বাণুই পুস্তবকের মতো সরাসরি জননকাজে অংশগ্রহণ করে।

একক কাজ
কাজ: ফুলের বিভিন্ন স্তবক পর্যবেক্ষণ।
উপকরণ: একটি ফুল, ব্লেড, চিমটা, ব্লটিং পেপার।
পদ্ধতি: ফুল সংগ্রহ করে এর যেকোনো একটির বিভিন্ন অংশ আলাদা করে ব্লটিং পেপারে সাজিয়ে রাখ।
একক কাজ
কাজ: গর্ভাশয়ের প্রস্থচ্ছেদ পর্যবেক্ষণ।
উপকরণ: একটি পরিণত ফুল, ব্লেড, সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
পদ্ধতি: ফুল থেকে গর্ভাশয় আলাদা করে নিয়ে ব্লেড দিয়ে প্রস্থচ্ছেদ কর এবং অণুবীক্ষণ যন্ত্রে
পরীক্ষা কর। যা যা দেখলে তা খাতায় লেখ।

পুষ্পমঞ্জরি (inflorescence)
পুষ্পমঞ্জরি তোমরা সবাই দেখেছ। অনেক গাছের ছোট একটি শাখায় ফুলগুলো বিশেষ একটি নিয়মে সাজানো থাকে, ফুলসহ এই শাখাকে পুষ্পমঞ্জরি বলে। যে শাখায় ফুলগুলো সজ্জিত থাকে, তাকে মঞ্জরিদণ্ড বলে। এ শাখার বৃদ্ধি অসীম হলে অনিয়ত (recemose) পুষ্পমঞ্জরি এবং পুষ্প উৎপাদনের ফলে বৃদ্ধি থেমে গেলে তাকে নিয়ত (cymose) পুষ্পমঞ্জরি বলে। পরাগায়নের জন্য পুষ্পমঞ্জরির পুরুত্ব অনেক বেশি।

চিত্র 11.03: (ক) অনিয়ত পুষ্পমঞ্জরি, (খ) নিয়ত পুষ্পমঞ্জরি

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion